মোঃ রবিউল ইসলাম, সাভার উপজেলা প্রতিনিধি:
সাভারে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে দুই যুবককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন শিকদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুয়েল মিয়া। এর আগে, গত ২১ জুলাই বিকেলে সুজন সিকদার’সহ সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগীদের পরিবার।
মামলায় আসামিরা হলেন- সাভারের চাপাইন এলাকার সরাফত আলীর ছেলে ও ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন শিকদার (৩২), তার সহযোগী বিরুলিয়া ইউনিয়নের সামাইর গ্রামের মৃত রুস্তম সিরালীর ছেলে আমির সিরালী (৬২), একই ইউনিয়নের কাকাব গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে শাহিনুর রহমান (৫৮), নাইরাদি গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে তুহিন আহমেদ (৩২), ঋষিপাড়া গ্রামের এনায়েত উল্লাহ ওরফে ফটিকের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩২) সহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী।
অপরদিকে, হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন- সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার আজগরা এলাকার ফজল আলী শেখের ছেলে ছাত্রদলের কর্মী শরীফুল ইসলাম (২৪) ও তার বন্ধু রবিউল ইসলাম রবিন (২৫)।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান এলাকার সাত্তার মিয়া মার্কেটের সামনে বসে চা খাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী যুবক শরীফুল ইসলাম ও তার বন্ধু ছাত্রদলের রবিউল ইসলাম। এসময় ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন শিকদারের নেতৃত্বে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীফুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। এসময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তার বন্ধু রবিউল ইসলামকেও কুপিয়ে জখম করে তার পায়ের রগ কেটে দেয় ছাত্রদলের নেতা সুজন সিকদার’সহ সাথে থাকা সন্ত্রাসীরা।
ঘটনার পর আহতদের ডাক-চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে শরীফুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন আহত শরীফুল ইসলামের বাবা ফজল আলী শেখ।
এদিকে, হামলার প্রতিবাদে ঘটনার পরের দিন ২১ জুলাই ছাত্রদল নেতা সুজন সিকদার’সহ সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ভুক্তভোগীদের পরিবার।
হামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের মা রওশন আরা বেগম বলেন, আমি গার্মেন্টসে চাকরি করে সংসার চালাই। সন্ত্রাসীদের হামলায় আমার ছেলে এখন মৃত্যুশয্যায়। ওর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে সুজন সিকদার’সহ সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর বিচার চাই।
সন্ত্রাসী হামলায় আহত শরীফুল ইসলামের বাবা ফজল আলী শেখ বলেন, বাসায় ফেরার পথে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সন্ত্রাসী সুজন শিকদারের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আমার ছেলেকে রাস্তায় আটকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত করছে।
মামলা দায়েরের পর সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুয়েল মিয়া বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। হামলার ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদেরও শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন সিকদার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
উল্লেখ্য, হত্যাচেষ্টার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সুজন শিকদার ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর থেকেই হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি, দখল আধিপত্য, বিস্তার’সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন ছাত্রদলের এই বিতর্কিত নেতা।