মোঃ রবিউল ইসলাম, সাভার উপজেলা প্রতিনিধি:
জনগণের মালিকানা তাদের হাতে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার সাভারের আশুলিয়ায় ‘নারকীয় জুলাই আশুলিয়া থানা সংলগ্ন লাশ পোড়ানো স্থানে’ ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান-২০২৪: নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি এবং আমার দল বিএনপি বিশ্বাস করে, স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় সরকার পর্যন্ত, প্রতিটি স্তরে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেলে রাষ্ট্র এবং সরকারের জনগণের ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে। রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণ। জনগণকে দুর্বল রেখে রাষ্ট্র, রাজনীতি, সরকার কিংবা সংস্কার, কোন কিছুকেই শক্তিশালী ও টেক সই করা সম্ভব নয়, করা যাবে না। নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ এবং চর্চার মধ্যে দিয়েই রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং জনগণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রে জনগণ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠলে ভবিষ্যতে কেউ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আর দেশ কেউ তাবেদার রাষ্ট্রেও পরিণত করতে সক্ষম হবে না।
তিনি আরও বলেন, একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে নির্বাচন। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথা নিজেই বলতে পারে, সেটি নিশ্চিত করার স্বার্থেই দেশে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অগ্রাধিকার দেয়।
গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মানুষদের ভূমিকা ও ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ যদি শ্রমজীবী মানুষ জানতে চায়, সেই শহীদের আত্মা যদি জানতে চায়- গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশী শ্রমজীবী মানুষ শাহাদাৎবরণ করেছে। কিন্তু বর্তমানে সরকার ও প্রশাসনে শ্রমজীবী এবং কর্মজীবী মানুষের অবস্থান কী? পলাতক ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেখানেই বা তাদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? শ্রমজীবী মানুষের অবদানকে স্মরণ করে ‘আমাদের কথা আমরাই বলব’-এই শিরোনামটি আমি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত বাস্তবধর্মী বলে মনে করি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘আজকে অনেক রকম কথা হচ্ছে, রাজনৈতি কানুবাদ হচ্ছে, হবেই, গণতন্ত্রের সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কোন কিছু করবেন না যাতে আবার গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। রাজনৈতিক দল গুলোর কাছে আমাদের সেটাই আহ্বান থাকবে। আমাদের আহ্বান থাকবে যে, ছোটখাট বিষয় গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যে অবস্থায় আবার সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোন সুযোগ পান দেশে ফিরে আসার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অনুরোধ করব সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে, আসুন আমরা অতি দ্রুত আমাদের সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোকে মিটিয়ে ফেলে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাই। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করি। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে আজকে এই মহিলা (শহীদ পরিবারের এক সদস্য) যে অভিযোগ করেছেন, সে অভিযোগ আমাদেরকে শুনতে হতো না। আমি আজকে যারা আয়োজন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্য, একটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম একটি আয়োজন করেছেন এবং এতে করে জাতির বিবেক জেগে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি বলব একটি কথা, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু এনজিওবাদ আজকে দেশ চালাচ্ছে। এখন থেকে কিভাবে মুক্তি নেবেন, সেই পথ নির্দেশনা দেবেন আমাদের নেতা- এটাই প্রত্যাশা করি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া শহীদ পরিবারের মধ্যে বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবণ গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু, জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু শান্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই সহ অন্য অন্য জেলার উপজেলার, থানার,ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এর বিএনপির অংগ সংগঠনের সকল নেতাকর্মীরা ও সাধারণ জনগন।