বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও বিজয়ী শক্তির লড়াই হবে: ভিপি শামসুর আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত ক‌লকাতায় নিজের ৭০ ফুট উচ্চতার মূর্তি উদ্বোধন করবেন মেসি নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য, আর গণভোট শত বছরের জন্য: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল: তারেক রহমান কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা দিয়ে যা বললেন আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ পদত্যাগ করেছেন রিমাউন্ট ভেটেরিনারি এন্ড ফার্ম কোরের বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা তপশিল ঘোষণার সময় নিয়ে আলোচনা চলছে: ইসি সচিব

বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
                                             
  •   Update Time : বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৩k Time View  
  •                                      
                                   
                               

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মন্তব্য করেছেন যে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ যেন এক গভীর অন্ধকারের বোঝা বয়ে বেড়িয়েছে, যেন দেশটি এক অদৃশ্য কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক দীর্ঘ লেখায় তিনি এই অনুভূতির কথা তুলে ধরেন।

তিনি লেখেন, এই ১৬ বছরের সময়টা ছিল এক ভয়াবহ দমবন্ধ করা বাস্তবতা। কেউ এই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে অনুভব করেছে, আর কেউ নীরবে, নিঃশব্দে সইতে হয়েছে। বিশেষ করে যারা তখনকার শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী—মিথ্যা মামলা, নির্যাতনের হুমকি, রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, নিখোঁজ হওয়ার শঙ্কা আর পরিবারগুলোর অসহায় অপেক্ষা। অসংখ্য পরিবার আজও ব্যথা নিয়ে প্রশ্ন করে—কেন তাদের প্রিয় মানুষটি আর ফিরে আসেনি?

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ছিল এই দুঃসহ সময়ের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা—প্রতিটি জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই ছিল সর্বাধিক আক্রান্ত। এমনকি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন, অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ—সবাই মানবাধিকারের সংকটময় বাস্তবতার মধ্য দিয়ে গেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা—এই মৌলিক অধিকারগুলো যেন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই হুমকির মুখে পড়েছিল।

তিনি আরও জানান, ২০১৫ সাল থেকে তাকে নিজের মৌলিক অধিকার—কথা বলার স্বাধীনতা—থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করা হয়। দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি, অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বক্তব্য প্রকাশ না করার কঠোর নির্দেশনা জারি ছিল। তবুও আরোপিত নীরবতার মধ্যেও তিনি গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যায় এবং মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছেন। তার ভাষায়, ‘সত্যকে কোনো নির্দেশনা দিয়ে থামিয়ে রাখা যায় না।’

বক্তব্যে তিনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কঠিন সময়ের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। মিথ্যা মামলা, কারাবন্দিত্ব, রাজনৈতিকভাবে তাকে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা—সবই ছিল একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিচ্ছবি। তবুও খালেদা জিয়া তার গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছেন—মানুষের অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে জাতিকে এগিয়ে নেওয়া যায় না।

তারেক রহমান বলেন, তিনিও ব্যক্তিগতভাবে এই নিঃসঙ্গ ও দুঃসহ সময়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তার মা, যিনি নিজেই দেশের নেতৃত্বের প্রতীক, তাকে নিজের ছেলেকে কারাগারে নেওয়ার, নির্যাতনের মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। তাদের আরেক ছেলে—তারেকের ভাই—চিরতরে হারিয়ে গেছে। হাজারো ভুক্তভোগী পরিবারের মতো তার পরিবারের ওপরও নেমে এসেছিল দুর্বিষহ চাপ ও নিপীড়ন। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হলো—কষ্ট মানুষকে সবসময় ভাঙে না; কষ্ট মানুষকে অনেক সময় আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্থিতধী সংগ্রাম তা-ই প্রমাণ করেছে। তিনি শিখিয়েছেন—অন্যায় যাতে আর কারও জীবনে না আসে, সেজন্য ন্যায়, নৈতিকতা, ক্ষমাশীলতা ও গণতান্ত্রিক চর্চাই হতে হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সামনে এখন শুধু রাজনীতি নয়—একটি বড় লক্ষ্য রয়েছে: একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার থাকবে, নিরাপত্তা থাকবে, কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। যেখানে ভিন্ন মতকে হুমকি মনে করা হবে না, বরং গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করা হবে। ভিন্নমতের কারণে কাউকে গুম বা নিপীড়নের শিকার হতে হবে না—এটাই হওয়া উচিত নতুন পথের প্রতিশ্রুতি।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করছে; তারা বিশ্বাসী সমাধানের রাজনীতিতে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন—কোনো বাংলাদেশিকেই রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, সে সরকারি সমর্থক হোক কিংবা বিরোধী। মানবাধিকার দিবসের এই দিনে তিনি আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাগর-রুনি, সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ অসংখ্য শহীদের কথা স্মরণ করেন, যেন দেশে আর কখনো নিপীড়ন, গুম বা দায়মুক্তি ফিরে না আসে।

বক্তব্যের শেষ অংশে তিনি বলেন, বিএনপি কঠিন সময় পার করেছে, ভয়াবহ ক্ষতির মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু ভেঙে পড়েনি—বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন আর আইনের শাসনের শক্তিতে আরও দৃঢ় হয়েছে। তারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়, যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠস্বর, অধিকার ও জীবন সম্মানিত হবে; যেখানে মানবাধিকারই হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 dailydhakabani
themesba-lates1749691102