
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ১২ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে—এ ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া তাঁর ভাষণে তিনি জানান, ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত দেশের ৩০০ আসনে একযোগে ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ করতে কমিশন ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ভাষণে সিইসি আরও জানান, একই দিন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ গণভোটকে তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষায়, “জুলাই সনদ কেবল একটি নীতিমালা নয়; এটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের ভিত্তি—যা জনগণের ভোটে বৈধতা পাবে।”
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে পড়েছিল। দীর্ঘদিনের অসন্তোষ, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং রাস্তায় রাস্তায় তরুণদের উপস্থিতির পর ৮ই আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশের রাজনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনা, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরিকে কেন্দ্র করে সরকার কাজ শুরু করে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’-এ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রথম জানান যে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলের নজর ছিল এই ঘোষণার দিকে, কারণ এটি ছিল রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রথম জাতীয় নির্বাচন। পরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আলাদা একটি গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ১৩ই নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন যে, নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে—দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের সার্বিক মতামত গ্রহণই এর লক্ষ্য।
ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি একটি আস্থার বার্তা পৌঁছেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটিই হতে যাচ্ছে প্রথম জাতীয় নির্বাচন, যা দেশে গণতান্ত্রিক ধারার পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।