
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শেষ বিদায় জানাতে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ঢাকায় আসছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পৌঁছাবেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলোও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভারতের এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানাবে বলে জানা গেছে।এদিকে, খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, ভুটান এবং মালদ্বীপের মন্ত্রিপর্যায়ের প্রতিনিধিরাও ঢাকায় আসবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এই উপস্থিতি বেগম খালেদা জিয়ার আঞ্চলিক রাজনৈতিক গুরুত্ব ও দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।তার মৃত্যুতে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘ (ইউএন) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীর শোক প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার এসব বিদেশি মিশন তাদের নিজ নিজ ফেসবুক পেজ ও আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানায়। তারা বাংলাদেশের জনগণ ও খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তার ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত—৩১ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি ও ২ জানুয়ারি—তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এই সময়কালে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একই সঙ্গে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে জনগণ যথাযোগ্য মর্যাদায় এই শোক পালন করতে পারে।জানাজা ও দাফনের সময়সূচি অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার দুপুর ২টায় ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবন মাঠ ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো ব্যাগ, ভারী সামগ্রী বা সন্দেহজনক বস্তু সঙ্গে আনা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, দাফনের কার্যক্রম রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পন্ন করা হবে। এ কারণে শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরস্থানে দাফনের সময় সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার সীমিত থাকবে। আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।সার্বিকভাবে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ আন্তর্জাতিক মহলে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন, তা স্মরণ করে দেশ-বিদেশের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন।