
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারায়নডহর গ্রামে ধারণ করা মাত্র ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে ভিডিওটি নতুন করে নজরে আসে। জানা গেছে, ভিডিওটি গত ১৫ ডিসেম্বর ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়। পরে সেটি ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, নারায়নডহর এলাকার জামিয়া বদরুল হুদা খাতুনে জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার সামনে এক যুবক স্কেটিং করতে করতে ভ্যানে যাতায়াতরত এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত করছে। একপর্যায়ে তরুণী তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ দিয়ে যুবককে আঘাত করলে ওই যুবক তাকে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করে।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পুরো ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিওটি ধারণ করেন রোমান। স্কেটিং করা যুবকের চরিত্রে ছিলেন রাকিব হাসান (২০) এবং মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন হানিফ (২০)। হানিফ ও রোমান আপন দুই ভাই। তারা পূর্বধলা উপজেলার নারায়নডহর গ্রামের ওয়াসিম মিয়ার সন্তান।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, অভিযুক্ত দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথাকথিত ‘ফানি ভিডিও’ তৈরি করে আসছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই ভিডিওটি নির্মাণ করা হয়। যদিও নির্মাতাদের দাবি, ভিডিওটি শুধুই বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি, তবে বাস্তবে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই এ ধরনের ভিডিওকে সমাজের জন্য ক্ষতিকর আখ্যা দিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা আত্মগোপনে রয়েছেন এবং তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে খেলাফত আন্দোলনের নেতা গাজী আব্দুর রহীম রুহি বলেন, “এ ধরনের ভিডিও যাতে ভবিষ্যতে আর তৈরি না হয়, সেজন্য দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
পূর্বধলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বুলবুল বলেন, “এই ধরনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান খান জানান, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্বধলা থানাকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূর্বধলা থানার ওসি মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পর থেকেই তারা আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।”