মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

হাড় কাঁপানো শীতে দুই শিশুকে রাস্তায় ফেলে রেখে গেল বাবা-মা

নিজস্ব প্রতিবেদক
                                             
  •   Update Time : সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২৮k Time View  
  •                                      
                                   
                               

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কনকনে শীতের রাতে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। অসুস্থ অবস্থায় চার বছর বয়সী এক কন্যাশিশু ও তার দুই বছর বয়সী বাকপ্রতিবন্ধী ছোট ভাইকে সড়কের পাশে ফেলে রেখে চলে গেছেন তাদেরই জন্মদাতা মা–বাবা। গভীর রাতে কাঁপতে থাকা এই দুই শিশুকে উদ্ধার করে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মহিম উদ্দিন নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক।

গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের মাজারগেট এলাকায় সড়কের পাশে অসহায় অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায় শিশু দুটিকে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ছোট্ট শরীর নিয়ে কাঁপতে থাকা শিশুদের দেখে থেমে যান মহিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “সন্ধ্যার পরও দুই শিশুকে একা বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। কাছে গিয়ে কথা বললে বড় শিশুটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের অবস্থার কথা জানায়। তখন মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে তাদের ফেলে রেখে যেতে পারিনি। নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে আশ্রয় দিই।”

উদ্ধার হওয়া শিশুদের মধ্যে বড় বোন আয়শা (৪) জানায়, তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মৌলভীর দোকান এলাকায়। সে আরও জানায়, তার বাবার নাম খোরশেদ আলম এবং মায়ের নাম ঝিনুক আখতার। আয়শার ভাষ্যমতে, মা–বাবার কাছ থেকে তাদের নিয়ে আসা এক খালা সড়কের পাশে বসিয়ে রেখে চলে যান। ছোট ভাইটি কথা বলতে না পারলেও তার শারীরিক অবস্থায় অসুস্থতা ও প্রতিবন্ধিতার চিহ্ন স্পষ্ট।

মহিম উদ্দিনের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, “শিশু দুটি খুবই দুর্বল ও অসুস্থ ছিল। ছোট শিশুটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় হাঁটতেও পারছিল না। আমরা তাদের গরম পানি দিয়ে গোসল করাই, পরিষ্কার কাপড় দিই এবং খাবার খাওয়াই। রাতে একটু আরাম পাওয়ার পর বড় শিশুটি কথা বলতে শুরু করে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের ধারণা, শিশু দুটি অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী হওয়ায় মা–বাবা নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”ঘটনাটি জানার পর আনোয়ারা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোমেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, “আমরা শিশু দুটির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছি। বিভিন্ন থানায় তাদের ছবি ও তথ্য পাঠানো হয়েছে, যাতে পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।”

এদিকে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার জানান, উদ্ধার হওয়া দুই শিশুর নিরাপত্তা ও চিকিৎসার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, “শিশু দুটিকে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সেইভহোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই শিশুদুটির বাবা–মায়ের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, পাশাপাশি মানবিকতার জন্য মহিম উদ্দিন ও তার পরিবারের প্রশংসা করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 dailydhakabani
themesba-lates1749691102