
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতিসংঘ রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর (UNRC) অফিস এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর যৌথ উদ্যোগে “Minnesota Protocol on the Investigation of Potentially Unlawful Deaths” বিষয়ক একটি দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদর দপ্তর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ও সিআইডি প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ, বিপিএম, পিপিএম।
সভাপতির বক্তব্যে সিআইডি প্রধান বলেন, “সিআইডি এখন একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও তথ্যভিত্তিক তদন্ত সংস্থা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার।” তিনি আরও বলেন, “মানবাধিকার রক্ষা ও বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সঠিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রমাণনির্ভর তদন্ত পদ্ধতি প্রয়োগ অত্যাবশ্যক, আর এ ধরনের কর্মশালা সে প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”
কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের Extrajudicial, Summary or Arbitrary Executions–বিষয়ক বিশেষ র্যবপোর্টিয়র Mr. Morris Tidball-Binz। তিনি বলেন, “Minnesota Protocol হলো একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা, যা আইনবহির্ভূত মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে সহায়তা করে এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।” তিনি তার তার উপস্থাপনায় লিবিয়া ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে আইন বহির্ভূত হত্যাকান্ডের তদন্তের উদাহরণ দিয়ে মিনেসোট প্রটোকলের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন। তার বক্তব্যের পূর্বে জনাব শম্পা ইয়াসমীন, বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক), সিআইডির ডিএনএ ও অন্যান্য ফরেনসিক সুবিধা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিচার বিভাগের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, চিকিৎসা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি, প্রযুক্তি ও অনুসন্ধান খাতের সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী সহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনরা। বহুমাত্রিক পটভূমি থেকে আগত এই অংশগ্রহণকারীরা কর্মশালায় তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও বাস্তব ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন, যা আলোচনাকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত ও ফলপ্রসূ।
কর্মশালায় আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল: আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী মৃতদেহ শনাক্তকরণ (Disaster Victim Identification), বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল ও নিরপেক্ষ ফরেনসিক রিপোর্ট প্রস্তুতের প্রক্রিয়া, মানবাধিকার সংরক্ষণে পুলিশি তদন্তের নৈতিক ও পেশাগত দিকনির্দেশনা, এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচিত কেস স্টাডির উপস্থাপন।
এছাড়াও, ডা. মমতাজ আরা (সহকারী অধ্যাপক, ফরেনসিক মেডিসিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ), অতিরিক্ত ডিআইজি জান্নাতুল হাসান (পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা) এবং আহমেদ ফেরদৌস (ডেপুটি চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্ট, সিআইডি) বাংলাদেশে ডিএনএ ফরেনসিক চর্চা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন। তাদের আলোচনায় জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জসমূহও ফুটে উঠে।
সমাপনী দিনে বক্তারা প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে দেশের তদন্তব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, মানবিক ও স্বচ্ছ করার ওপর জোর দেন। অংশগ্রহণকারীদের মূল্যবান মতামত ও অভিজ্ঞতা সিআইডির পেশাগত উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাশেষে সিআইডি প্রধান ভবিষ্যতে সিআইডি’র ফরেনসিক সক্ষমতা আরও সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। অনুষ্ঠানের Keynote speaker, Mr. Morris Tidball-Binz তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আইনবহির্ভূত মৃত্যুর তদন্ত কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ভ্রাম্যমাণ ডিএনএ ল্যাব স্থাপন, অন-সাইট মরদেহ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সহযোগীদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন।