
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকায় আসছেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। হাইকমিশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এবং জানাজায় অংশ নিতে ইসহাক দার আগামীকাল বুধবার ঢাকায় পৌঁছাবেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এদিকে, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার এসব বিদেশি মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের নিজ নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়। বিবৃতিগুলোতে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনীতি এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকার কথা স্মরণ করা হয়।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার জাতীয়ভাবে শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত—অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি—তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়কালে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে সর্বস্তরের মানুষ তার জানাজা ও শোক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন।
এর আগে, মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল।
চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শারীরিক অবস্থা অতিমাত্রায় সংকটাপন্ন হওয়ায় এবং ভ্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং দেশ-বিদেশে তার মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।