
সাভার উপজেলা প্রতিনিধি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময় ধামরাই থানা এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর নিশংস হামলা, ধামরাই-আশুলিয়া এলাকায় ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা ও সাভার-আশুলিয়া, ধামরাই এলাকায় অন্তবর্তী কালীন সরকারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী নাশকতার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ও বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে।
তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চলে যান আত্মগোপনে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় পল্লী চিকিৎসক পরিচয়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ফার্মেসি পরিচালনা করছিলেন। মজিবর রহমান আত্মগোপনে থেকে ফার্মেসির আড়ালে সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় অন্তবর্তী কালীন সরকারের বিরুদ্ধে তার অনুসারীদের দিয়ে অবৈধ ঘটিকা মিছিল, গাড়ি পোড়ানোসহ বিভিন্ন নাশকতার পরিকল্পনা ও নাশকতা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
গত ৬ নভেম্বর সাভারের বলিয়ারপুর এলাকায় নাশকতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আওয়ামী লীগের একদল দুর্বৃত্ত। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ৭ নভেম্বর সন্ত্রাস বিরোধী আইনে সাভার মডেল থানায় মামলা হয়। মামলার তদন্তে নেমে মজিবর রহমানের সংশ্লিষ্টতা পায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো: আসাদুজ্জামান। পরবর্তীতে তাকে ধরতে মাঠে নামে সাভার মডেল থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার দিবাগত (১৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১২টায় সাভারের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অভিযানের নেতৃত্ব দেন সাভার মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জাকির আল আহসান ও এসআই ইমরান হোসাইন।
বুধবার দুপুরে মুজিবর রহমানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি দৈনিক ঢাকা বানী কে নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা।
গ্রেপ্তারকৃত মজিবর রহমান (৫০), ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা নয়াচর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এর আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বৃহত্তর ঢাকা জেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। মজিবর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের পতিত পলাতক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের অনুসারী।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হয়ে ধামরাই এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, ধামরাই-আশুলিয়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা, সম্প্রতি অন্তবর্তী কালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নাশকতার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দমনে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অন্তবর্তী কালীন সরকারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী নাশকতার অংশ হিসেবে প্রফেশনাল ভাড়াটে অপরাধীদের দিয়ে সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা মানবজমিনকে জানান, পুলিশের নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধামরাই ও আশুলিয়া এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা, গুলি করে হত্যা ও সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার মজিবর রহমানকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।