
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দায়িত্ব প্রায়শই বর্তমান সরকারের ওপর পড়ে, বিশেষত ফ্যাসিস্টি মনোভাবের শাসক হিসেবে শেখ হাসিনার ওপর।
ড. আসিফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে একটি প্রহসনমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, যা ছিল অকথ্য নির্যাতনের সমতুল্য। তিনি আরও দাবি করেছেন, যে মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণভাবে সাজানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, যা পরে সর্বোচ্চ আদালতের আপিল ও রিভিউ পর্যায়ের রায়ে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ড. আসিফের মতে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও বিচার প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করে তাকে ওই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে সবসময় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখেন এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
যদি সময়মতো সুযোগ হতো, বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত এবং হয়তো জীবন রক্ষার কিছু সম্ভাবনা থাকত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পরিস্থিতি এমনভাবে ঘটেছে যে, তিনি শেষ পর্যন্ত আমাদের মাঝে নেই। তবে ড. আসিফ বলেন, সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয় হলো, বেগম খালেদা জিয়া সমগ্র দেশের মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন।
উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম সুষ্ঠু, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন, যাতে আগামীকালের জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়। তিনি গণমাধ্যমকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যাদের সহায়তায় ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। ড. আসিফের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো যে, খালেদা জিয়ার প্রতি রাজনৈতিক এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সঠিক মর্যাদা প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “যদি এক বা দুই বছর আগে আমাদের কাছে সুযোগ আসত, হয়তো আমরা আরও কিছু করতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি চলে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এখন হলো তার স্মৃতিকে সম্মানিতভাবে রাখতে এবং তার জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়ায় যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা।” তিনি দেশের মানুষকে শান্তি ও একতার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বেগম খালেদা জিয়ার শেষকৃত্য প্রক্রিয়া সব রকম অশান্তি ছাড়া সম্পন্ন হয়।